ওয়েব সাইট বানাবেন? যে বিষয়গুলো জানা অত্যাবশ্যক।
সাম্প্রতিক কালে দেশে একটি নতুন ব্যবসার উন্মেষ ঘটেছে এবং খুব স্বল্প সময়ে তা বেশ প্রসার লাভ করতে সক্ষম হয়েছে। এই ব্যবসা করতে খুব বেশি পুঁজি কিংবা আলাদা অফিস থাকার তেমন বাধ্যবাধকতা না থাকায় এই ব্যবসায়ের উদ্যোক্তার সংখ্যা ক্রমশই জ্যামিতিক হারে বেড়ে চলেছে। হ্যাঁ, এই ব্যবসায়ের নাম ওয়েব হোস্টিং ব্যবসায়ী। বর্তমানে সারা দেশে ঠিক কতজন ওয়েব হোস্টিং ব্যবসায়ের সাথে জড়িত আছেন তার কোন সুুনির্দিষ্ট সংখ্যা খুঁজে বের করা সত্যই কঠিন। অন্যদিকে আমাদের দেশের অধিকাংশ মানুষের এখনো ওয়েব হোস্টিং সম্পর্কে পর্যাপ্ত ধারণা নেই। আমাদেরকে জাতিগতভাবে অনেকে ‘হুজুগে বাংগালী’ বলে থাকে। তাই যেকোন বিষয় আমাদের দেশে যখন কোন ভাবে জনপ্রিয়তা পায় তখন সবাই হুমড়ি খেয়ে পড়ে তা গ্রহণ করার জন্য কিংবা পরখ করে দেখার জন্য। আর এই সুযোগে এই সার্ভিস প্রদানকারী সাধু ব্যবসায়ীদের পাশাপাশি একদল অসাধু ব্যবসায়ীদেরও জন্ম হয়। এর ফলে অসাধু ব্যবসায়ীদের খপ্পরে পড়ে আর্থিক ক্ষতির সম্মুখীন হতে হয় সহজ সরল মানুষগুলোর। মূলত সব কিছুর মূলেই কাজ করে পর্যাপ্ত জ্ঞান এবং সচেতনতার অভাব।তথ্যের অবাধ প্রবাহ নিশ্চিতকরনের অন্যতম একটি মাধ্যম ওয়েবসাইট, যার মাধ্যমে যেকোন স্থানে বসে কাংখিত তথ্য পাওয়া সম্ভব। তথ্যের অবাধ প্রবাহের যুগে প্রতিটি প্রতিষ্ঠানেরই প্রয়োজন নিজস্ব ওয়েবসাইট, যার মাধ্যমে প্রতিষ্ঠান সর্ম্পকিত তথ্যসমূহ যেকোন মুহূর্তে যেকোন স্থানে বসেই জানা যাবে। ইদানিং অনেকেই ব্যক্তিগত ওয়েবসাইট করার প্রতি আগ্রহী হচ্ছেন। আবার অনেকেই অনলাইনে অর্থ উপার্জনের আশায় বøগিং সাইট করছেন। ওয়েব সাইটের চাহিদা বাড়ার কারনেই মূলত হোস্টিং ব্যবসায়ীদের সংখ্যাও বেড়ে গেছে। হোস্টিং ব্যবসায় শুরু করার ক্ষেত্রে অন্যান্য ব্যবসার মত তেমন কোন নিয়ম নীতি কিংবা আনুষ্ঠানিকতার প্রয়োজন হয় না। তবে ওয়েবের উপর ভালো জ্ঞান থাকা অত্যাবশ্যক। অন্যদিকে ওয়েবসাইট তৈরী করতে গিয়ে ওয়েব হোস্টিং ব্যবসায়ীদেরকোন প্রকার প্রতারনার হাত থেকে বাঁচার জন্য একজন ক্লায়েন্টেরও থাকতে হবে ওয়েব হোস্টিং সম্পর্কে ভালো জ্ঞান। এখন জানা প্রয়োজন একটি ওয়েব সাইট তৈরী করতে কি কি বিষয় প্রয়োজন।
ডোমেইন নেম কি ?ডোমেইন হচ্ছে আপনার আইডিন্টিফিকেশন ব্যান্ড যা ইন্টারনেটে আপনার অ্যাডমিনিসস্ট্রেটিভ অটোনমি, অথরিটি এবং কন্ট্রোল প্রকাশ করে।
ওয়েব ঠিকানা তৈরীর ধাপ সমূহঃ
ডোমেইন রেজিস্ট্রেশন ওয়েব সাইট তৈরী করতে প্রথমেই আপনার প্রয়োজন একটি ডোমেইন নাম। আপনার কাংখিত ডোমেইন নামটি যদি ইতিপূর্বে কেউ রেজিস্ট্রেশন করে ফেলে তাহলে এর সাথে কিছু একটা যোগ করে দিতে হবে। ডোমেইনের নাম পছন্দ করতে কোন প্রতিষ্ঠান কিংবা বিশেষজ্ঞের কাছে যাওয়ার প্রয়োজন নেই। ডোমেইন নেম চেক করার জন্য বেশ কিছু সাইট রয়েছে। পাশাপাশি প্রতিটি হোস্টিং প্রতিষ্ঠানের ওয়েব সাইটে ঢুকেও আপনি নাম খালি আছে কিনা চেক করে নিতে পারেন। আপনার প্রতিষ্ঠানের ধরণ বুঝে ডোমেইন নেমের এক্সটেনশন বেছে নেয়া উচিত। যেমন আপনি যদি কোন কোম্পানির জন্য ওয়েবসাইট করেন তাহলে শেষে ডট কম বেছে নিন। কোন অর্গানাইজেশনের ওয়েবসাইট করতে চাইলে শেষে ডট ওআরজি বেছে নিন। এমনি করে ইনফরমেশন ভিত্তিক সাইটের জন্য ডট ইনফো, নেট ওয়ার্কিংয়ের জন্য ডট নেট, মোবাইল কোম্পানির জন্য ডট মোবি এবং ব্যবসায়ের জন্য ডট বিজ ব্যবহার করুন। এতে আপনার ওয়েব এড্রেসের নাম দেখেই সাইটের ব্যাপারে একটি স্বচ্ছ ধারণা পেয়ে যাবেন সবাই।আন্তর্জাতিকভাবে, জনপ্রিয় টপ লেভেল ডোমেইন গুলোর বার্ষিক মূল্য প্রায় ১০ ইউএস ডলার যা বাংলাদেশী টাকায় রুপান্তর করলে প্রায় ৮০০ টাকার মত হয়। আমাদের দেশের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান সমূহ বিভিন্ন মূল্যে ডোমেইন রেজিস্ট্রেশন করে থাকে।
কিছু ব্যবসায়ী ৭০০ থেকে ১০০০ টাকায় ডোমেইন রেজিস্ট্রেশন করিয়ে থাকে। আবার কিছু ব্যবসায়ী বিনামূল্য থেকে শুরু করে ২০০/৩০০ টাকায়ও ডোমেইন রেজিস্ট্রেশন করিয়ে থাকে। সত্যিকার অর্থে ৮০০ টাকার চেয়ে কম মূল্যে কোন ব্যবসায়ীর পক্ষে ডোমেইন বিক্রি করে লাভ করা সম্ভব নয়। যদি কেউ এই ধরনের অফার দিয়ে থাকে তাহলে বুঝতে হবে হয়তো তারা মার্কেট ধরার জন্য ভর্তুকি দিচ্ছে নয়ত এখানে অন্য কোন মার্কেটিং পলিসি কাজ করছে।
হোস্টিং স্পেস এবং ব্যান্ডউইথ ওয়েব সাইট তৈরীর জন্য নাম রেজিস্ট্রেশনের পর আপনার প্রয়োজন ভার্চুয়াল স্পেস। অর্থাৎ আপনার ওয়েব সাইটের তথ্য সমূহ সংরক্ষণের জন্য একটি নির্দিষ্ট স্থানের প্রয়োজন। এই স্থানটিকে বলা হয় সার্ভার। পৃথিবীর অধিকাংশ ওয়েব সার্ভারই বর্তমানেযুক্তরাষ্ট্র এবং যুক্তরাজ্যে অবস্থিত। বিভিন্ন ওয়েব হোস্টিং প্রতিষ্ঠান সমূহ এসব সার্ভার থেকে স্পেস কিনে নেয়। আপনি যখন আপনার ওয়েব সাইটের জন্য কোন প্রতিষ্ঠানের কাছ থেকে ওয়েব স্পেস ক্রয় করবেন তখন একে বলা হয় ওয়েব হোস্টিং। ওয়েব সার্ভারগুলোর গুনগত মানের তারতম্যের কারনে দামের ক্ষেত্রে বৈচিত্র দেখা যায়।এর প্রমান মিলবে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের হোস্ট প্যাকেজ গুলোর দামের প্রার্থক্য দেখলে। কেউ দুই হাজার টাকায় ১ গিগাবাইট হোস্টিং করছে আবার কেউ ৬হাজার টাকায় বিক্রি করছে ১গিগাবাইট।ব্যন্ডউইথ হোস্টিং কেনার সময় ব্যন্ডউইথের বিষয়টি লক্ষ্য রাখবেন। ব্যন্ডউইথ হচ্ছে আপনার ওয়েব সাইটের মাসিক ডাটা ট্রান্সপার। আপনার ওয়েব সাইটে প্রতিমাসে কতজন ভিজিটর কতবার কতক্ষন আপনার সাইটে ভিজিট করবে তার উপর নির্ভর করে ব্যন্ডউইথ খরচ হবে।সাবডোমেইন কি ?আপনার ডোমেইনের অধীনে মূল সাইটের পাশাপাশি আরও কয়েকটি সাইট থাকতে পারে সেগুলোকে সাবডোমেইন বলা হয়। ধরুন আপনার সাইটের নাম www.example.com এর অধীনে আপনি স্পোর্টস নামে একটিসাবডোমেইন করলে তার এড্রেস হবে subdomain.example.com এভাবে একটি ওয়েব সাইটের অধীনে অনেকগুলো সাবডোমেইন সাইট থাকতে পারে।
ওয়েব ডিজাইনওয়েব সাইটের জন্য নাম রেজিস্ট্রেশন এবং হোস্টিং এর পর্ব শেষ হলে যা লাগবে তা হচ্ছে একটি সুন্দর ডিজাইন। আপনার ওয়েব সাইটের উদ্দেশ্য এবং চাহিদার উপর নির্ভর করে সাইটের ডিজাইন করতে হবে। ওয়েব সাইটের ডিজাইন অনেক রকমের থাকতে পারে। মূলত দুই রকমের ওয়েব ডিজাইন খুবপরিচিত। সেগুলো হলো স্ট্যাটিক ডিজাইন এবং ডায়নামিক ডিজাইন। ডিজাইনের ক্ষেত্রে আবার বিভিন্ন ল্যাংগুয়েজ রয়েছে। এর মধ্যে বর্তমানে পিএইচপি খুব জনপ্রিয়। ইদানিং আবার ওয়েব সাইট তৈরীর সি এম এস রয়েছে। যেমন : ওয়ার্ডপ্রেস এবং জুমলা। এগুলোতে ডিজাইন করতে চাইলে আপনি নিজেও শিখে নিয়ে করতে পারেন। অথবা পরবর্তীতে তথ্যসমূহ রক্ষনাবেক্ষণ করতে পারেন। আপনি যখন কোন প্রতিষ্ঠানে ওয়েব ডিজাইনের ব্যাপারে কথা বলবেন তখন আপনার প্রয়োজনের কথা সেখানে খুলে বলুন।
যা জানতে হবেঃ ওয়েব সাইট তৈরী করতে ডোমেইন রেজিস্ট্রেশন, হোস্টিং এবং ডিজাইনের প্যাকেজ ক্রয়ের ক্ষেত্রে যেসব বিষয়ে সতর্ক থাকা উচিত সেগুলো হচ্ছে–ডোমেইন রেজিস্ট্রেশনের সময় সংশিøষ্ট প্রতিষ্ঠানের কাছ থেকে টাকার রশিদ এবং মালিকানার প্রমাণস্বরুপ প্রয়োজনীয় কাগজপত্র বুঝে নিন।-ডোমেইন কন্ট্রোল প্যানেলের ইউজার নেম এবং পাসওয়ার্ড বুঝে নিন।-ব্যক্তিগত কারও কাছ থেকে ডোমেইন না নিয়ে রেজিস্টার্ড কোন প্রতিষ্ঠানের কাছ থেকে ওয়েব হোস্টিং নেয়া ভালো।-ডট বিডি রেজিস্ট্রেশন সরাসরি বিটিসিএল এর কাছ থেকে করুন।-ডোমেইন হোস্টিং এর সময় সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানেরকাছ থেকে কমপক্ষে ১৫-৩০ দিন পর্যন্ত মানি ব্যাক গ্যারান্টি বুঝে নেয়ার চেষ্টা করুন।-যেই প্রতিঠানের কাছ থেকে ডোমেইন হোস্টিং নিচ্ছেন সেই প্রতিষ্ঠানের সেবা গ্রহণকারী কোন ক্লায়েন্টের ওয়েব সাইট ভিজিট করে দেখতে পারেন এবং প্রয়োজনে ফোন করে তথ্য নিতে পারেন।-আপনার ডোমেইনের who is যাচাই করে নিন। এটি যাচাই করতে http://whois.net/ site এ প্রবেশ করুন। সেখানে একটি বক্স দেখতে পাবেন। বক্সে আপনার ওয়েব এড্রেসটি টাইপ করে এন্টার চাপুন।তখন যে পেজটি ওপেন হবে সেখানে আপনার নাম, ঠিকানা এবং সম¯Í তথ্য আছে কিনা তা যাচাই করুন।-ডোমেইন কেনার সময় কন্ট্রোল প্যানেল বুঝে নিন।আপনার ডোমেইনের পিং টাইম যাচাই করে নিন। এটা আপনি নিজে নিজেই করতে পারেন। http://www.dnsgoodies.com/ সাইটে প্রবেশ করুন। সেখানে হোস্ট ইনফরমেশন নামে একটি বক্স দেখতে পাবেন। বক্সে রয়েছে রিজলভ লুকআপ, হু ইজ (ডোমেইন নেম), হু ইজ (আইপি ওনার), চেক পোর্ট, পিং হোস্ট এবং ডু ইট অল নামে বেশ কিছু পয়েন্ট। এই বক্সের নিচে একটি ফাঁকা বক্স দেখবেন। সেখানে যেকোন সাইটের এড্রেস টাইপ করে গো বাটনে ক্লিক করুন। অবশ্য এর আগে ডু ইট অল লেখার সামনে বক্সটিতে একটি ক্লিক করে নিন। এখানে আপনি আপনার সাইটের সুম্পর্কে তথ্য পেয়ে যাবেন। মনে রাখবেন পিং টাইম যত কম হবে ততই ভালো হবে। এখানে পিং টাইম মিলিসেকেন্ডে প্রকাশ করা হয়।
Note: লেখাটি Tanveer Razwan এ Linked প্রোফাইল থেকে নেয়া!